জীবন ও তার বৈচিত্র্য প্রশ্ন উত্তর ক্লাস ৯

জীবন ও তার বৈচিত্র্য- Class 9 Life Science- Chapter 1

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

 

1.  জীবন বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ  জীবের প্রধান বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ, প্রজনন, বিপাক, উত্তেজিতা অভিযোজন, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের প্রকাশকে জীবন বলে।

2. জনন বলতে কী বোঝ? বংশগতি কাকে বলে ?

উত্তরঃ  জনন: জনিতৃ জীব থেকে একই প্রকার বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীব সৃষ্টির জৈবনিক প্রক্রিয়াকে জনন বলে।

বংশগতিঃ যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার চারিত্রিক গুণাবলি বংশপরম্পরায় সন্তান-সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে।

3. জরা ও মৃত্যু বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ  বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবদেহের শারীরবৃত্তীয় ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে জরা বলে। একসময় জীবনের সমস্ত লক্ষণগুলি লুপ্ত হয়, একে মৃত্যু বলে।

4. সজীব বস্তু বা জীব কাকে বলে ?

উত্তরঃ  যেসব বস্তু জননের মাধ্যমে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টিতে সক্ষম এবং বৃদ্ধি, বিপাক, উত্তেজিতা, ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি প্রাণ বা জীবনের ধর্ম প্রকাশ করতে পারে, তাদের সজীব বস্তু বা জীব বলে।

যেমন—উদ্ভিদ, প্রাণী ইত্যাদি।

5. জড় বস্তু কাকে বলে ?

উত্তরঃ   যেসব বস্তুর চেতনা নেই, স্বেচ্ছায় নড়চড়া করতে পারে না, বৃদ্ধি হয় না, উত্তেজনায় সাড়া দেয় না এবং বংশবিস্তার করে না অর্থাৎ, প্রাণের ধর্মগুলি যাদের মধ্যে প্রকাশ পায় না তাদের জড় বস্তু বলে। যেমন— টেবিল, পাথর ইত্যাদি।

6. চলন ও গমন কাকে বলে?

উত্তরঃ  চলনঃ যে প্রক্রিয়ায় জীব উদ্দীপকের প্রভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে না, তাকে চলন বলে।

গমন: যে প্রক্রিয়ায় জীব উদ্দীপকের প্রভাবে অথবা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তাকে গমন বলে।

7. বিবর্তন বা অভিব্যক্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ  যে অতি মন্থর কিন্তু অবিরাম গতিশীল পরিবর্তনের ফলে উদ্বংশীয় (পূর্বপুরুষ) সচল জীব থেকে নতুন প্রকারের জটিলতর জীবের উদ্ভব ঘটে, তাকে বিবর্তন বা অভিব্যক্তি বলে।

8.প্রকরণ কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রকরণ: কোনো জীব প্রজাতির অন্তর্গত সমস্ত জীবে জিনগত বৈচিত্র্যের কারণে যে বাহ্যিক গঠনগত বিভিন্নতা দেখা যায়, তাকে প্রকরণ বলে।

9. অভিযোজন কাকে বলে ?

উত্তরঃ  অভিযোজন: কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা ও সাফল্যের সাথে প্রজননের জন্য জীবের অঙ্গসংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে, তাকে অভিযোজন বলে।

10. মিউটেশন বা পরিব্যক্তি কাকে বলে? পরিব্যক্তিতা কী?

উত্তরঃ  মিউটেশন বা পরিব্যক্তি: ক্রোমোজোমস্থিত কোনো জিনের আকস্মিক ও স্থায়ী পরিবর্তনকে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি বলে।

পরিব্যক্তিতা: ক্রোমোজোমস্থিত কোনো পরিব্যক্তি ঘটানোর ক্ষমতাকে পরিব্যক্তিতা বলে।

11.  জীবনচক্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ  জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ অবস্থা, বংশবৃদ্ধি এবং মৃত্যু— এই পর্যায়গুলির ধারাবাহিকভাবে চক্রবৎ আবর্তনকে জীবনচক্র বলা হয়।

যেমন—ব্যাঙের জীবনচক্র।

12. উত্তেজিতা কাকে বলে? উদ্ভিদদেহে উত্তেজিতার একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ  উত্তেজিতা: বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে জীবদেহে যে প্রতিক্রিয়া বা পরিবর্তন ঘটে, তাকে উত্তেজিতা বলে।

উদাহরণ: লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে পাতাগুলি তৎক্ষণাৎ মুদে যায়।

13. উয়তাকে জীবের জীবনীশক্তির পরিচালক বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ  উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের অন্তর্গত প্রতিটি জীবের জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দিষ্ট উয়তার প্রয়োজন হয়। সেই কারণে উন্নতাকে জীবের জীবনীশক্তির পরিচালক বলে।

14.  জীবের উৎপত্তির আধুনিক মতবাদটি লেখো। এই তত্ত্বের জনক কে?

উত্তরঃ  জীবের উৎপত্তির আধুনিক মতবাদটিকে জৈবরাসায়নিক উৎপত্তির মতবাদ বা অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্ব বলা হয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী ‘অজৈব রাসায়নিক পদার্থ থেকে জৈব পদার্থ এবং জীবের উৎপত্তি ঘটেছে’। আদি পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার ভৌত শক্তি,

যেমন—তড়িং বিকিরণ, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদির প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে অজৈব গ্যাসীয় বস্তু থেকে জৈব অণুর উৎপত্তি ঘটে।

তত্ত্বের জনক: বিজ্ঞানী ওপারিন ( 1924) প্রথম এই মতবাদের প্রস্তাবনা করেন। বিজ্ঞানী হ্যালডেন পরে এই মতবাদটিকে সমর্থন করেন।

15. হট ডাইলিউট স্যুপ কী?

উত্তরঃ  কেমোজেনি মতবাদ অনুযায়ী, জীব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে অজৈব অণুগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে ক্ষুদ্র জৈব অণুর (কার্বোহাইড্রেট, অ্যামিনো অ্যাসিড, স্নেহ পদার্থ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ) উৎপত্তি ঘটে। এই উদ্ভূত পদার্থসমূহ সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে ভাসতে থাকে। বিজ্ঞান হ্যালডেন (1929) এই ক্ষুদ্র জৈব অণুসমূহের সঙ্গে সমুদ্রের উত্তপ্ত জলের সমাহারকে ‘হট ডাইলিউট স্যুপ’ বলে অভিহিত করেন।

16. প্রোটিনয়েড কী? এর গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ  প্রোটিনয়েড: বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স (1958) প্রায় 18 প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিডের শুষ্ক মিশ্রণকে 150°C – 180°C উয়তায় উত্তপ্ত করেন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইডের মতো বৃহৎ অণু গঠন করে, যাকে প্রোটিনয়েড বলে।

গুরুত্ব: প্রোটিনয়েডগুলি জলে একত্রিত হয়ে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠন করে। বিজ্ঞানী ফক্স-এর মতে আদিকোশ গঠনে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

17.  মাইক্রোস্ফিয়ারে জীবের কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় ?

উত্তরঃ  প্রোটিনয়েড অণুগুলির সংযুক্তির ফলে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠিত হয়। মাইক্রোস্ফিয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

[1] মাইক্রোস্ফিয়ার দ্বিস্তর আবরণযুক্ত।

[2] এদের মধ্যে চলন দেখা যায়।

[3] এরা অভিস্রবণ ধর্মযুক্ত।

[4] মাইক্রোস্ফিয়ারের অভ্যন্তরে উৎসেচকের ধর্মযুক্ত প্রোটিন পদার্থ বর্তমান।

[5] এরা দ্বি-বিভাজন পদ্ধতিতে বিভাজিত হতে সক্ষম।

18. নগ্ন জিন কী?

উত্তরঃ  জীব সৃষ্টির রাসায়নিক মতবাদ অনুযায়ী, কোশ সৃষ্টির অন্তিম পর্যায়ে পিউরিন, পিরিমিডিন প্রভৃতি নিউক্লিওসাইডগুলি পরস্পর সংযুক্ত হয়ে নিউক্লিক অ্যাসিড গঠন করে। এই নিউক্লিক অ্যাসিড প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম ছিল। এই নিউক্লিক অ্যাসিড গঠনে হিস্টোন বা অন্য প্রোটিন অংশ নেয় না। নিউক্লিয় পর্দা দ্বারা আবৃত না থাকার ফলে এই নিউক্লিক অ্যাসিডগুলিকে নগ্ন জিন (naked gene) বলে।

19. কোয়াসারভেট কী? এর গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ কোয়াসারভেট: আদিম পৃথিবীতে সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে শর্করা, প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতি জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত, বিভাজনে সক্ষম কোলয়েড-জাতীয় কণাকেই কোয়াসারভেট বলে। বিজ্ঞানী ওপারিনের মতে, এটিই হল আদিম কোশ।

গুরুত্ব: বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের জলে নিউক্লিওপ্রোটিন সমন্বিত কোয়াসারভেট থেকেই প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়।

20. প্রজাতি কাকে বলে?

উত্তরঃ  একটি নির্দিষ্ট জীবগোষ্ঠীর অন্তর্গত জীব, যারা বংশগতভাবে এক ও আন্তঃপ্রজননক্ষম এবং জননের মাধ্যমে প্রজনন অপত্যের জন্ম দেয়, তাদের প্রজাতি বলে।

21.  বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ  বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই প্রকৃতির ভারসাম্য এবং জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিজ্ঞানীদের মতে, যত বেশি সংখ্যক প্রজাতি পৃথিবীতে টিকে থাকবে এবং পারস্পরিক ক্রিয়ায় অংশ নেবে, প্রকৃতির ভারসাম্য ততই সুস্থির হবে।

22.  বাইরে থেকে আসা কোনো প্রজাতি কীভাবে জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে ?

উত্তরঃ  বাইরে থেকে আসা কোনো উদ্ভিদের বীজ অনেক সময়ে নতুন অঞ্চলে এমনভাবে অভিযোজিত হয় যে, ওই পরিবেশ তার কাছে খুবই অনুকূল হয়। এর ফলে আশেপাশের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন—কচুরিপানা সৃষ্টির ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য বিশেষভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

23) জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? এটি প্রধানত কত প্রকার ?

উত্তরঃ  জীববৈচিত্র্য: কোনো একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বা পরিবেশে, বিভিন্ন প্রকার পরিবেশে এবং বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের গঠন, আকার ও প্রকৃতি অনুযায়ী যে বিভিন্নতা দেখা যায়, তাকে জীববৈচিত্র্য বলে।

প্রকারভেদ: জীববৈচিত্র্য প্রধানত তিন প্রকার। যথা—

[1] জিনগত বৈচিত্র্য,

[2] প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং

[3] বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

24. জিনগত বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উত্তরঃ  একই প্রজাতির মধ্যে জিনের বিভিন্ন প্রকরণ এবং সমন্বয়কে জিনগত বৈচিত্র্য বলে। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য পৃথক হয় ।

25. প্রজাতি বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উত্তরঃ  কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত বিভিন্ন প্রজাতির জীবের বৈচিত্র্যকে ওই অঞ্চলের প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। কোনো বিশেষ অঞ্চলে বসবাসকারী প্রজাতিসমূহের প্রকারের ভিত্তিতে এবং প্রজাতির সংখ্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রজাতি বৈচিত্র্য নির্ধারিত হয়।

26.  বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উত্তরঃ  একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র এবং তাতে উপস্থিত বিভিন্ন জীবসম্প্রদায়ের যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে। বিভিন্ন জীব বিভিন্নভাবে সমন্বিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্র গঠন করে। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের গঠন ও কাজ পৃথক হয়। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের এই বিভিন্নতাই হল বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

যেমন—প্রবাল দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র, বৃষ্টিবনের বাস্তুতন্ত্র।

27. ওপারিন-হ্যালডেন তত্ত্বের স্বপক্ষে একটি পরীক্ষা-নির্ভর প্রমাণ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ  ওপারিন-হ্যালডেন তত্ত্বের প্রমাণ স্বপক্ষে বিজ্ঞানী মিলার এবং ইউরে, প্রাচীন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির সাহায্যে জীবন সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁরা জলীয় বাষ্প (H2O), মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3) ও হাইড্রোজেন গ্যাস (H2)-এর মিশ্রণে তড়িৎবিচ্ছুরণ ঘটিয়ে, বিভিন্ন প্রকার সরল জৈব যৌগ (সরল শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড) উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন।

সিদ্ধান্ত:  এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, অক্সিজেন-বিহীন প্রাচীন পৃথিবীর বিজারক পরিবেশে অতিবেগুনি রশ্মি বা বজ্রপাতের প্রভাবেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগগুলি সৃষ্টি হয়েছিল।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *