পরিমাপ- class 9 Chapter -1 Short and Long Question Answer

1.  ভৌত রাশি কয়প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ ভৌত রাশি দু-প্রকার—(i) স্কেলার ও (ii) ভেক্টর রাশি।

2. এমন একটি মাত্রাহীন ভৌত রাশির উদাহরণ দাও যার একক আছে?

উত্তরঃ কোণ হল এমন একটি ভৌত রাশি যার মাত্রা নেই, কিন্তু একক (রেডিয়ান) আছে।

3. দুটি মাত্রাহীন ও এককহীন ভৌত রাশির উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ দুটি মাত্রাহীন ও এককহীন ভৌত রাশি হল

i) পারমাণবিক ভর এবং ii) আপেক্ষিক গুরুত্ব।

4. কোন্ ভৌত রাশির একক স্টেরেডিয়ান ?

উত্তরঃ ঘনকোণের একক হল স্টেরেডিয়ান।

5. বার্ন (barn) মৌলিক একক না লব্ধ একক ?

উত্তরঃ বার্ন হল লব্ধ একক।

6. বার্ন কী ?

উত্তরঃ 1 barn = 10-28 m2, নিউক্লিয়াসের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল পরিমাপে barn একক ব্যবহার করা হয়।

7. তড়িৎপ্রবাহ কী রাশি ? 

উত্তরঃ তড়িৎপ্রবাহ স্কেলার রাশি।

8. ক্ষেত্রফল কী রাশি ?

উত্তরঃ ক্ষেত্রফল ভেক্টর রাশি।

9. ক্রনোমিটার ঘড়ির ব্যবহার লেখো?

উত্তরঃ ক্রনোমিটার ঘড়ি সঠিকভাবে গ্রিনিচের সময় নির্দেশ করে।

10. তিনটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি স্কেলার রাশির এককের উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ তিনটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি স্কেলার রাশির একক হল কার্যের একক।

11. তিনটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি ভেক্টর রাশির এককের উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ তিনটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি ভেক্টর রাশির একক হল বলের একক।

12. দুটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি স্কেলার রাশির এককের উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ দুটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি স্কেলার রাশির একক হল দ্রুতির একক।

13. দুটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি ভেক্টর রাশির এককের উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ দুটি ভিন্ন মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি ভেক্টর রাশির একক হল বেগের একক।

14. একক প্রকাশের প্রচলিত পদ্ধতি দুটি কী কী ? 

উত্তরঃ একক প্রকাশের জন্য প্রচলিত পদ্ধতি দুটি হল- (i) CGS পদ্ধতি এবং (ii) SI

15. একই এককাবাশষ্ট একটি স্কেলার  ও ভেক্টর রাশির  উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ দ্রুতি ও বেগ এই দুটি ভৌত রাশির একক একই, যাদের মধ্যে দ্রুতি হল স্কেলার রাশি এবং বেগ হল ভেক্টর রাশি।

জেনে রাখোঃ

1960 সালে The International Bureau of Weights and Measures (BIPM Bureau International des Poids et Measures)-এর উদ্যোগে ওজন ও পরিমাপ বিষয়ক | মহাসম্মেলনে একটি একক পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছিল। এটি হল বর্তমানে ব্যবহৃত পরিমাপের একক পদ্ধতি যা | আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি বা SI (Le System international d’unités The International System  tem of Units) নামে  পরিচিত।

অন্যদিকে CGS পদ্ধতি প্রথম চালু হয় ফ্রান্সে, তাই একে ফ্রেঞ্জ পদ্ধতিও বলা হয়। ফ্রেঞ্জ পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একক হল মিটার। তাই এই পদ্ধতির আর-এক নাম মেট্রিক পদ্ধতি (metric system)।

16. CGS পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলির নাম লেখো?

উত্তরঃ CGS পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একক সেন্টিমিটার (cm), ভরের একক গ্রাম (g) ও সময়ের একক সেকেন্ড (s) ।

17. SI-তে মূল একক কয়টি ?

উত্তরঃ SI-তে মূল এককের সংখ্যা হল 7 ।

18. 1 AU দূরত্ব বলতে কতখানি দূরত্বের কথা বোঝানো হয় ?

উত্তরঃ সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব হল 1 AU (বা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল একক) দূরত্ব।

19.  আলোকবর্ষ মৌলিক না লঞ্চ একক ?

উত্তরঃ আলোকবর্ষ হল মৌলিক একক।

20.  1 আলোকবর্ষ = কত কিমি?

উত্তরঃ আলোকবর্ষ = 9.46 x 1012 km |

21. 1 পারসেক = কত আলোকবর্ষ?

উত্তরঃ 1 পারসেক = 3.26 আলোকবর্ষ।

22 অণু-পরমাণুর ভর মাপার জন্য কোন্ একক ব্যবহার করা হয় ?

উত্তরঃ অণু-পরমাণুর ভর মাপার জন্য u একক (unifiedatomic mass unit) ব্যবহার করা হয়।

23. বিভিন্ন মণি-মুক্তোর ভর মাপার জন্য কোন্ একক ব্যবহার করা হয় ?

উত্তরঃ বিভিন্ন মণি-মুক্তোর ভর মাপার জন্য ক্যারটি (carat) একক ব্যবহার করা হয়। 1 carat = 0.2g 1

24. আলোক সেকেন্ড কাকে বলে 

উত্তরঃ শূন্য মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে আলো ৷ সেকেন্ডে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে 1 আলোক-সেকেন্ড বলা হয়।

25.  চন্দ্রশেখর লিমিট (CSL) ও সূর্যের ভরের মধ্যে কী সম্পর্ক ?

উত্তরঃ 1 চন্দ্রশেখর লিমিট = 1.39 × সূর্যের ভর

26. লিটারের সংজ্ঞায় কোন্ উয়তার উল্লেখ থাকে ?

উত্তরঃ লিটারের সংজ্ঞায় 4°C বা 277K উয়তার উল্লেখ থাকে।

27.  কোন্ উয়তায় জলের ঘনত্ব সর্বাধিক?

উত্তরঃ 4°C বা 277 K উয়তায় জলের ঘনত্ব সর্বাধিক।

28. 4°C উয়তায় জলের ঘনত্ব কত?

উত্তরঃ 4°C উয়তায় জলের ঘনত্ব 1 g/cm3।

29.  1 m3 = কত L?

উত্তরঃ 1 m3 = 1000 L

30. 1 dm3 = কত L?

উত্তরঃ 1 dm3 = 1L |

31.  সেকেন্ডের সংজ্ঞায় কোন্ মৌলিক পদার্থের উল্লেখ করা হয় ?

উত্তরঃ সেকেন্ডের সংজ্ঞায় Cs 133 -এর উল্লেখ করা হয়।

32.  নক্ষত্রদের পারস্পরিক দূরত্ব পরিমাপে কোন্ একক ব্যবহার করা হয় ?

উত্তরঃ নক্ষত্রদের পারস্পরিক দূরত্ব পরিমাপে AU (astronomical unit) ব্যবহার করা হয়।

33. সাধারণ স্কেলের সাহায্যে কি 0.4mm মাপ নেওয়া যায়?

উত্তরঃ সাধারণ স্কেলের লঘিষ্ঠ ধ্রুবক 1 mm, তাই সাধারণ স্কেলের সাহায্যে 1 mm-এর কম মাপ, যেমন এখানে 0.4 mm মাপ নেওয়া সম্ভব নয় ।

34.  1 গ্যালন = কত লিটার?

উত্তরঃ  1 গ্যালন = 4.536 লিটার।

35. দৈর্ঘ্য পরিমাপের বৃহত্তম একক কী?

উত্তরঃ দৈর্ঘ্য পরিমাপের বৃহত্তম একক হল পারসেক।

36. এমন একটি যন্ত্রের নাম লেখো যার সাহায্যে 0.01 cm দৈর্ঘ্য সঠিকভাবে মাপা যায়।

উত্তরঃ স্লাইড ক্যালিপার্স হল এমন একটি যন্ত্র, যার সাহায্যে 0.01 cm দৈর্ঘ্য সঠিকভাবে মাপা যায়।

37. এমন একটি যন্ত্রের নাম লেখো যার সাহায্যে 0.001 cm দৈর্ঘ্য সঠিকভাবে মাপা যায়।

উত্তরঃ এমন একটি যন্ত্র হল স্কু-গেজ।

38. দোলক ঘড়ির কার্যকর দৈর্ঘ্য বলতে কী বোঝ ? 

উত্তরঃ দোলক ঘড়ির দোলকের ঝুলন বিন্দু থেকে পিণ্ডের ভারকেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্বকে কার্যকর দৈর্ঘ্য বলা হয়।

39. দোলক ঘড়ির স্প্রিং-এ কী ধরনের শক্তি সঞ্চিত থাকে ? 

উত্তরঃ দোলক ঘড়ির স্প্রিং-এ স্থিতিশক্তি সজ্জিত থাকে।

40.  কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর ভর পরিমাপ করা হয় ?

উত্তরঃ সাধারণ তুলাযন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর ভর পরিমাপ করা হয়।

41.  CGS পদ্ধতিতে কোনো তরলের ঘনত্ব 0.8g/cm3 হলে SI-তে ঘনত্ব কত ?

উত্তরঃ SI-তে তরলটির ঘনত্ব = 800kg/m3 |

42.  ওজন বাক্সে বাটখারাগুলির ভরের অনুপাত লেখো।

উত্তরঃ ওজন বাক্সে বাটখারাগুলির ভর 5: 2:2:1 অনুপাতে রাখা হয়।

43.1 micron = কত cm ?

উত্তরঃ 1 micron = 104 cm /

44.  তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কোনো পদার্থের ঘনত্বের কীরূপ পরিবর্তন হয় ?

উত্তরঃ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কোনো পদার্থের ঘনত্ব হ্রাস পায়। ব্যতিক্রম — জলের ক্ষেত্রে 0° থেকে 4°C পর্যন্ত উয়তা বৃদ্ধি করলে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ

Grip to world

1.  ভৌত রাশি কাকে বলে? কয়েকটি ভৌত রাশির উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ যে সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয়কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা যায় তাদের ভৌত রাশি বলা হয়।  উদাহরণ : দৈর্ঘ্য, ভর, উষ্ণতা, কার্য, সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল প্রভৃতি হল ভৌত রাশি ।

 2 . সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয়কে কি ভৌত রাশি বলা যায়—উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিষয় দেখি বা অনুভব করি। কিন্তু এদের মধ্যে সবকটি পরিমাপযোগ্য নয়। যেমন—দয়া, স্নেহ, রাগ প্রভৃতি। যেহেতু এই সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয় পরিমাপযোগ্য নয়, তাই এদের ভৌত রাশি বলা হয় না।

আবার দৈর্ঘ্য, ভর, সময় প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিষয় পরিমাপযোগ্য, তাই এদের ভৌত রাশি বলা হয়। সুতরাং, সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয়কে ভৌত রাশি বলা যায় না।

3. স্কেলার রাশি কাকে বলে ? কয়েকটি স্কেলার রাশির উদাহরণ দাও?

উত্তরঃ যে সমস্ত ভৌত রাশির শুধুমাত্র মান আছে কিন্তু অভিমুখ নেই তাদের স্কেলার রাশি বলা হয়।

উদাহরণ : দৈর্ঘ্য, ভর, উয়তা, কার্য প্রভৃতি হল স্কেলার রাশি।

4. ভেক্টর রাশি কাকে বলে ? উদাহরণ দাও? 

উত্তরঃ যে সমস্ত ভৌত রাশির মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে এবং যাদের যোগ ভেক্টর যোগের নিয়মানুযায়ী হয়, তাদের ভেক্টর রাশি বলা হয়।

উদাহরণ : সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল প্রভৃতি হল ভেক্টর রাশি।

5.  স্কেলার ও ভেক্টর রাশির মধ্যে পার্থক্য লেখো?

উত্তরঃ

স্কেলার রাশি

ভেক্টর রাশি

1.    স্কেলার রাশির শুধুমাত্র মান আছে, অভিমুখ নেই। 1.  ভেক্টর রাশির মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে।
2.    সমজাতীয় স্কেলার রাশির যোগ, সাধারণ বীজগাণিতিক নিয়মানুযায়ী হয়। 2  .সমজাতীয় ভেক্টর রাশির যোগ সাধারণ বীজগাণিতিক নিয়মানুযায়ী হয় না।
3.    দুইটি স্কেলার রাশির গুণফল সর্বদা একটি স্কেলার রাশি হয়। 3. দুইটি ভেক্টর রাশির গুণফল একটি স্কেলার অথবা ভেক্টর রাশি হতে পারে।

 

6.  কোনো ভৌত রাশির মান ও অভিমুখ থাকলেই কি তাকে ভেক্টর রাশি বলা হয় ? অথবা, তড়িৎপ্রবাহের মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে, কিন্তু তড়িৎপ্রবাহমাত্রা স্কেলার রাশি কেন ?

উত্তরঃ কোনো ভৌত রাশির মান ও অভিমুখ থাকলেই যে তাকে ভেক্টর রাশি বলা যাবে, তা নয়। যেমন—তড়িৎপ্রবাহ। তড়িৎপ্রবাহের মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে, কিন্তু তড়িৎপ্রবাহের যোগ ভেক্টর যোগের নিয়মানুযায়ী হয় না। তাই তড়িৎপ্রবাহ ভেক্টর রাশি নয়, এটি স্কেলার রাশি।

 7. ‘1 kg পরিমাণ আলুর বাজারদর 20 টাকা’ এই বাক্যে আলু, আলুর পরিমাণ, এদের মধ্যে কোনটি ভৌত রাশি, কোটিই বা নয়—কেন তা বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ বাক্যটিতে আলুর ভর 1 kg, অর্থাৎ এটি পরিমাপযোগ্য প্রাকৃতিক রাশি। তাই আলুর ভর হল একটি ভৌত রাশি । আলু একটি পদার্থ, যা পরিমাপযোগ্য নয়। তাই এটি রাশি নয়।

 ৪ .নিম্নলিখিত রাশিগুলির মধ্যে কোটি স্কেলার ও কোটি ভেক্টর তা উল্লেখ করো : দৈর্ঘ্য, সময়, ভর, ওজন, বল, দ্রুতি, বেগ, ত্বরণ, ভরবেগ, কার্য, ক্ষমতা, চাপ, সরণ, কম্পাঙ্ক, ঘনত্ব।

উত্তরঃ  স্কেলার রাশি: দৈর্ঘ্য, সময়, ভর, দ্রুতি, কাৰ্য, ক্ষমতা, চাপ, কম্পাঙ্ক, ঘনত্ব।

9. একক কাকে বলে ?

উত্তরঃ  কোনো ভৌত রাশি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে, ওই ভৌত রাশির একটি সুবিধাজনক ও নির্দিষ্ট মানকে প্রমাণ ধরে, তুলনামূলকভাবে ওই ভৌত রাশির পরিমাপ করা হয়। ওই নির্দিষ্ট মানকে পরিমাপের একক বলা হয়।

10. এককের প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তরঃ  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় পরিমাপ উল্লেখ করা আবশ্যক। সেইজন্য কোনো ভৌত রাশির পরিমাপের ক্ষেত্রে এককের প্রয়োজন। কোনো ভৌত রাশিকে প্রকাশ করা হয় সাংখ্যমান ও এককের সাহায্যে। একক ছাড়া পরিমাপ সম্ভব নয়। বিভিন্ন ভৌতরাশির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন বা ভৌত রাশি সম্পর্কিত সমীকরণের সঠিকতা যাচাই-এর জন্যও এককের প্রয়োজন।

 11. নির্দিষ্ট রাশি পরিমাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট একক থাকা প্রয়োজন—একথা তুমি সমর্থন কর কি না তা উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ হ্যাঁ, নির্দিষ্ট রাশি পরিমাপের জন্য অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট একক থাকা প্রয়োজন ।

উদাহরণস্বরূপ, ভাবা যেতে পারে দৈর্ঘ্য পরিমাপের প্রসঙ্গ। দৈর্ঘ্যের কোনো নির্দিষ্ট একক না থাকলে যে-কোনো দুটি জায়গা, যেমন কলকাতা থেকে দিল্লির দূরত্ব, এক-একজনের পরিমাপে এক-এক রকম হত। কিন্তু তুলনীয় কোনো দূরত্ব বুঝতে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হয় না। যেমন, যদি কারও কলকাতা থেকে বর্ধমানের দূরত্ব সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা থাকে, তবে কলকাতা থেকে দিল্লির দূরত্ব সেই দূরত্বের তুলনায় কতগুণ, তা বলা হলে, কলকাতা থেকে দিল্লির দূরত্ব সম্বন্ধে একটা ধারণা জন্মায়। এক্ষেত্রে কলকাতা থেকে বর্ধমানের দূরত্ব হল একক দূরত্ব। এইভাবে যে-কোনো রাশির পরিমাপের ক্ষেত্রেই একটি একক থাকা প্রয়োজন।

 12. প্রাথমিক বা মৌলিক বা মূল একক কাকে বলে ? SI-তে প্রাথমিক এককগুলি কী কী ?

উত্তরঃ যে সমস্ত ভৌত রাশির একক পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল নয়, অর্থাৎ স্বাধীনভাবে গঠন করা হয়েছে এবং যাদের সাহায্যে অন্যান্য ভৌত রাশির একক গঠন করা যায়, সেই সমস্ত ভৌত রাশির এককগুলিকে মৌলিক একক বলা হয়।

জেনে রাখোঃ

SI-তে সাতটি মূল একক ছাড়াও সমতল কোণ (plane an gle) ও ঘনকোণ (solid angle) এই দুটি ভৌত রাশির একককে সম্পূরক একক (supplementary units) হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সমতল কোণের একক হল রেডিয়ান (rad) ও ঘনকোণের একক হল স্টেরেডিয়ান (sr)। কিন্তু 1995 খ্রিস্টাব্দে এই দুটি একককে সম্পূরক এককের শ্রেণি থেকে বাদ দিয়ে লব্ধ এককের শ্রেণিভুক্ত করা হয়।

13.দৈর্ঘ্য, ভর ও সময়ের একককে মৌলিক একক বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ ভর ও সময়ের একক হল মৌলিক একক, কারণ—

1. দৈর্ঘ্য, ভর ও সময়ের একক পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল নয়, অর্থাৎ স্বাধীনভাবে গঠিত হয়।

2.  এই তিনটি ভৌত রাশির একককে বিশ্লেষণ করে সরলতর আকারে প্রকাশ করা যায় না।

3.  এই তিনটি ভৌত রাশির এককের সাহায্যে অন্যান্য ভৌত রাশির একক গঠন করা যায়।

 14. লব্ধ একক কাকে বলে? উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ যে সমস্ত ভৌত রাশির একক, এক বা একাধিক মূল এককের সাহায্যে গঠিত হয়, সেই সমস্ত ভৌত রাশির এককগুলিকে লঞ্চ একক বলা হয়। যেমন—বেগ, ত্বরণ, ভরবেগ, বল, কার্য প্রভৃতি রাশির একক হল লম্ব একক।

উদাহরণঃ বেগ হল কোনো বস্তুর সরণের হার। বেগের একক যে লম্ব একক তা নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে বোঝা যায়।

বেগ =বেগের একক = সরণের একক দৈর্ঘ্যের একক = সময়ের একক সময়ের একক সুতরাং, বেগের একক দৈর্ঘ্য ও সময় এই দুটি মৌলিক এককের সাহায্যে গঠিত, তাই এটি লখ একক।

15.  নীচের রাশিগুলির মধ্যে কোনটির একক মৌলিক ও কোনটির একক লব্ধ তা উল্লেখ করো ক্ষেত্রফল, আয়তন, সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল, কার্য, শক্তি, ক্ষমতা, ভরবেগ, ভর, ওজন, উচ্চতা, ঘনত্ব, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, পর্যায়কাল

উত্তরঃ মৌলিক এককবিশিষ্ট রাশি: সরণ, ভর, উচ্চতা, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, পর্যায়কাল।

লব্ধএককবিশিষ্ট রাশি: ক্ষেত্রফল, আয়তন, বেগ, ত্বরণ, বল, কার্য, শক্তি, ক্ষমতা, ভরবেগ, ওজন, ঘনত্ব।

 16 . দুটি মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি লম্ব এককের উদাহরণ দাও। 

উত্তরঃ দুটি মৌলিক একক দ্বারা গঠিত একটি লম্ব একক হল যুতির একক।

দ্রুতির একক = অতিক্রান্ত দূরত্বের একক দৈর্ঘ্যের একক সময়ের একক সময়ের একক

দ্রুতির একক হল দৈর্ঘ্য ও সময় এই দুটি মৌলিক রাশির এককের সাহায্যে গঠিত একটি লব্ধ একক।

17. একক পদ্ধতি কাকে বলে?

উত্তরঃ মৌলিক ও লব্ধ এককসহ সমস্ত ভৌত রাশির একককে একত্রে একক পদ্ধতি বলা হয়।

18. CGS পদ্ধতি বা SI-কে মেট্রিক পদ্ধতি বলার কারণ যুক্তিসহ লেখো।

উত্তরঃ  CGS পদ্ধতি বা SI-কে মেট্রিক পদ্ধতি বলার কারণ হল, CGS পদ্ধতি বা SI-তে কোনো ভৌত রাশির কোনো নির্দিষ্ট একটি একক থেকে অন্য কোনো ছোটো বা বড়ো এককে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দশমিক বিন্দু সরালেই চলে ।

যেমন, 500 cm = 5m = 5000 mm = 0.005 km | এই রূপান্তরের জন্য কোনো গুণ বা ভাগের প্রয়োজন হয় না। এইজন্য CGS পদ্ধতি বা SI-কে মেট্রিক পদ্ধতি বলা হয়।

19.  মেট্রিক পদ্ধতির সুবিধাগুলি লেখো।

উত্তরঃ মেট্রিক পদ্ধতির সুবিধাগুলি হল—

a.  মেট্রিক পদ্ধতিতে কোনো ভৌত রাশির কোনো নির্দিষ্ট একটি একক থেকে অন্য কোনো ছোটো বা বড়ো এককে রূপান্তরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দশমিক     বিন্দু সরালেই চলে, জটিল গুণ বা ভাগ করার দরকার হয় না।

b.  কোনো ভৌত রাশির এককের সঙ্গে ডেসি, সেন্টি, ন্যানো, কিলো, মেগা ইত্যাদি উপসর্গগুলি যোগ করে ছোটো বা বড়ো এককগুলি লেখা যায়।

c.  এই পদ্ধতিতে আয়তন ও ভরের একটি সুবিধাজনক সম্পর্ক আছে। যেমন— 1 cm জলের ভর 1g বা 1 L জলের ভর 1 kg (4°C উয়তায়)।

জেনে রাখোঃ

CGS পদ্ধতি বা SI-তে যে-কোনো একটি একককে 10 গুণ বড়ো বা 10 গুণ ছোটো এককে প্রকাশ করা যায়, এইজন্য উপসর্গ ব্যবহার করা হয়। উপসর্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত বিধি দেওয়া হল।

20. এককবিহীন রাশি কাকে বলে ? 

উত্তরঃ কোনো ভৌত রাশি যদি একই এককবিশিষ্ট দুটি ভৌত রাশির অনুপাত হয়, তাহলে ওই ভৌত রাশির কোনো একক থাকে না। এই ধরনের ভৌত রাশিকে এককবিহীন রাশি বলা হয়।

23. SI-তে দৈর্ঘ্যের এককের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ SI-তে দৈর্ঘ্যের একক হল মিটার (m)। আলো শূন্যস্থানে 1 299792458 সেকেন্ড সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে 1 মিটার (m) ধরা হয়।

24.  SI-তে ভরের এককের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ SI-তে ভরের একক হল কিলোগ্রাম (kg)। ফ্রান্সের প্যারিস শহরে, ‘আন্তর্জাতিক ব্যুরো অফ ওয়েট্স অ্যান্ড মেজার্স’-এর দপ্তরে রাখা প্ল্যাটিনাম-ইরিডিয়াম সংকর ধাতুর তৈরি একটি নিরেট চোঙের ভরকে 1 কিলোগ্রাম (kg) ধরা হয়।

 25.  SI-তে সময়ের এককের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ SI-তে সময়ের একক হল সেকেন্ড (s)। তাত্ত্বিকভাবে নির্দিষ্ট OK উয়তার যথাসম্ভব কাছাকাছি উয়তায় একটি স্থির সিজিয়াম 133 (Cs133 ) পরমাণুর ভূমিস্তরে অবস্থিত দুটি অতিসূক্ষ্ম স্তরের মধ্যে সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট বিকিরণের 9192631770 সংখ্যক পর্যায়ের জন্য অতিবাহিত সময়কে 1 সেকেন্ড বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

জেনে রাখোঃ

অতি  ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য মাপার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এককগুলি হল –

(a) মাইক্রন (micron, 2 ) – 1 মাইক্রন = 10-6 মিটার। | আণুবীক্ষণিক বস্তুর আকার মাইক্রন এককে প্রকাশ করা হয়।

(b) অ্যাংস্ট্রম (angstrom, A) – 1 অ্যাংস্ট্রম মিটার। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা কেলাসের মধ্যে পরমাণুর 10-10 ব্যবধান ইত্যাদি অ্যাংস্ট্রম এককে প্রকাশ করা হয়।

(c) X একক (X-unit)—1 X -একক10-13 মিটার। পরমাণুর ব্যাস X -এককে প্রকাশ করা হয়।

(d) ফার্সি (fermi) – 1 ফার্মি10-15 মিটার। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাস ফার্মি এককে প্রকাশ করা হয়।

 

1. জীবন ও তার বৈচিত্র- ক্লাস ৯ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর —–> Click here

2. জীবন ও তার বৈচিত্র্য প্রশ্ন উত্তর ক্লাস ৯—-> Click Here

জীবন ও তার বৈচিত্র- ক্লাস ৯ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী লেখো?

উত্তরঃ  

জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলিঃ

সজীব বস্তুর বহিঃপ্রকাশিত বৈশিষ্ট্যগুলিই ‘জীবন’রূপে চিহ্নিত হয়। এই সকল বৈশিষ্ট্য সজীব বস্তুকে জড়বস্তুর থেকে পৃথক করে। এখানে জীবনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল—।

  1. প্রজনন ও বংশবৃদ্ধিঃজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল জনন। প্রজননের মাধ্যমে কোনো জীব তার জীবনকালে নিজের মতো নতুন জীব সৃষ্টি করে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব বজায় থাকে।
  2. বিপাক: প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকা ও বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তি উৎপাদন ও শক্তি ব্যবহারের এই সমস্ত বিক্রিয়াগুলিকে একত্রে বিপাক বলে। যেমন—সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। সালোকসংশ্লেষ তাই সামগ্রিকভাবে একটি বিপাক পদ্ধতি।
  3. উত্তেজিতা: উত্তেজিতা জীবনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে জীবের সাড়া দেওয়াকে উত্তেজিতা বলা হয়। এই ধর্মের সাহায্যে জীবদেহে তাপ, চাপ, বেদনা প্রভৃতি অনুভূত হয়।যেমন—লজ্জাবতী লতার পাতা স্পর্শ করলে তা মুড়ে যায়।
  4. সংগঠন: প্রত্যেকটি জীবের দেহ একটি সুনির্দিষ্ট রীতিতে সংগঠিত হয়। সাধারণত কতকগুলি কোশ একত্রিত হয়ে কলা, কলা একত্রিত হয়ে অঙ্গ, অঙ্গ একত্রিত হয়ে তন্ত্র এবং অনেকগুলি তন্ত্র মিলে জীবদেহ গঠন করে।

       5. বদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ: জীবের আকার, আয়তন এবং শুষ্ক ওজন বেড়ে যাওয়াকে বৃদ্ধি বলে। স্থানীয় বৃদ্ধি জীবদেহের ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে।

2. পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অথবা, জীবনের উৎপত্তি সম্বন্ধে ওপারিন এবং হ্যালডেন মতবাদ লেখো।

উত্তরঃ  পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ

পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি বা জীবনের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে, এই বিষয়ে নানা মতবাদ প্রচলিত আছে। আলেকজান্ডার ওপারিন 1924 খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘The Origin of Life on Earth’ নামক গ্রন্থে জীবনের উৎপত্তি-সংক্রান্ত প্রকল্পটি প্রণয়ণ করেন। পরবর্তীকালে জে বি. এস. হ্যালডেন (1928) প্রাণের উৎপত্তি-সংক্রান্ত একইরকম মতবাদ প্রকাশ করেন। এই দুই বিজ্ঞানীর প্রস্তাবিত জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত তত্ত্বই বর্তমানে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য। এই তত্ত্বের নাম ‘জীবনের জৈবরাসায়নিক উৎপত্তির তত্ত্ব’ বা ‘অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্ব’। জীবনের উৎপত্তির ওটি পর্যায় হল—

[1] পৃথিবীর উৎপত্তি ও তার প্রাচীন পরিবেশের ক্রমপরিবর্তন,

[2] জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি বা কেমোজেনি,

[3] প্রাণের জৈবিক বিবর্তন বা বায়োজেনি।

প্রাণের উৎপত্তির এই পর্যায়গুলি নীচে আলোচনা করা হল।

  1. পৃথিবীর উৎপত্তি ও তার প্রাচীন পরিবেশের ক্রমপরিবর্তন:প্রায় 5-6 বিলিয়ন বছর পূর্বে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত গ্যাসীয় পিণ্ড। কয়েকশো মিলিয়ন বছর ধরে গ্যাসগুলি ঘনীভূতহয় এবং বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত হয়। সেই সময়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা ছিল প্রায় 5000 – 6000°C। এই অতি উচ্চ তাপমাত্রায় বিভিন্ন গ্যাস, যেমন—হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, মিথেন ইত্যাদির স্বাধীনভাবে অবস্থান করা অসম্ভব ছিল। তাই মৌলগুলি পরস্পরের সাথে অথবা কোনো ধাতু বা অধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে অবস্থান করত। এর ফলে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি থাকলেও মুক্ত অক্সিজেন উপস্থিত ছিল না। পৃথিবীর পরিবেশ ছিল বিজারক প্রকৃতির। ক্রমশ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত সুরু হয়। এই জলচক্রের আবির্ভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা হ্রাস পায় ও কঠিন উপাদানের উৎপত্তি ঘটে। বৃষ্টিপাতের ফলে জলরাশি সঙ্কিত হয়ে সমুদ্রের উৎপত্তি ঘটে।

 

  1. জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি বা কেমোজেনিঃ জীবন সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য জৈব যৌগের উৎপত্তিকে বিজ্ঞানী ওপারিন ও হ্যালডেন কেমোজেনি বলে অভিহিত করেন। কেমোজেনির ধাপগুলি হল—

[A] সরল জৈব যৌগের উৎপত্তি: পৃথিবীর প্রাচীন পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর তাপমাত্রাও হ্রাস পেতে থাকে। পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন যৌগগুলি (যেমন— হাইড্রোজেন, মিথেন, জলীয় বাষ্প) পরস্পর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তপ্ত বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে সরল জৈব যৌগ (যেমন—অ্যামিনো অ্যাসিড, সরল শর্করা, ফ্যাটি অ্যাসিড প্রভৃতি) গঠন করে। বজ্রবিদ্যুৎ, অতিবেগুনি রশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মি এই বিক্রিয়ায় শক্তি জোগান দেয়।

[B] জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তিঃ বিভিন্ন সরল যৌগগুলি ঘনীভবনের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিক অ্যাসিড ইত্যাদির সৃষ্টি করে।

[C] কোয়াসারভেট-এর উৎপত্ত: আদিম পৃথিবীতে সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, লিপিড প্রভৃতি জৈব যৌগ যুক্ত হয়। বিজ্ঞানী হ্যালডেন একেই ‘তপ্ত লঘু স্যুপ’ (hot dilute soup) নামে অভিহিত করেন। এই তপ্ত লঘু স্যুপের জৈব যৌগগুলি পরস্পর সংযুক্ত হয়ে একপ্রকার বিভাজনে সক্ষম কোলয়েড গঠন করে। বিজ্ঞানী ওপারিন এর নাম দেন কোয়াসারভেট। ওপারিনের মতে কোয়াসারভেট অস্থায়ী আকৃতি ও আয়তনবিশিষ্ট গঠন। কিন্তু বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স-এর মতে দ্বি-লিপিড পর্দাবৃত বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন যে যৌগ থেকে প্রাণের উৎপত্তি হয়, তা নির্দিষ্ট আকার ও আয়তনবিশিষ্ট। বিজ্ঞানী ফক্স এর নাম দেন মাইক্রোস্ফিয়ার

  1. প্রাণের জৈবিক বিবর্তন বা বায়োজেনিঃকোয়াসারভেটগুলি আদিম সমুদ্র থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড, প্রোটিন ইত্যাদি শোষণ করে। একাধিক কোয়াসারভেট পরস্পর মিলিত হয়ে বিপাকীয় ধর্মযুক্ত প্রোটোৰায়ন্ট গঠন করে। প্রোটোবায়ন্টগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব যৌগ গঠন করে। জৈব যৌগযুক্ত, প্রতিলিপির মাধ্যমে জননে সক্ষম রূপান্তরিত প্রোটোবায়ন্টগুলিকে ইয়োবায়ন্ট বা প্রোটোসেল বলে। এই প্রোটোসেলগুলি হল পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রথম সঞ্জীব বস্তু। পরবর্তীকালে সাইটোপ্লাজমের উৎপত্তি হওয়ায় প্রোটোসেল থেকে আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশ সৃষ্টি হয়।

 3. জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীববৈচিত্র্যের উৎস সম্বন্ধে আলোচনা করো?

উত্তরঃ  জীববৈচিত্র্য:

নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে উপস্থিত বিভিন্ন প্রকারের জীবের আকৃতি, গঠন ও প্রকৃতির বিভিন্নতার বৈচিত্র্যকে জীববৈচিত্র্য বলে।

জীববৈচিত্র্যের উৎসঃ

বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে বর্তমান মোট জীবিত প্রজাতির সংখ্যা সঠিকভাবে ধারণা করা বেশ কঠিন। এখনও পর্যন্ত প্রায় 1.9 মিলিয়ন প্রজাতির সম্বন্ধে জানা গেছে। এর মধ্যে, বিভিন্ন অণুজীব, ছত্রাক, পতঙ্গ, গৃহপালিত পশুপাখি অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ এদের প্রকৃত সংখ্যা সম্বন্ধে ধারণা করা কঠিন। বিজ্ঞানী টেরি আরউইন (1982)-এর মতে পৃথিবীতে উপস্থিত মোট প্রজাতির সংখ্যা প্রায় 30 মিলিয়ন। জীবনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জনন। এর মাধ্যমে জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক সজীব বস্তুই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নিরিখে একে অপরের থেকে কিছুটা হলেও ভিন্ন হয়। এই ভিন্নতার জন্য দায়ী হল জীবকোশে উপস্থিত বংশগতীয় বস্তু বা জিন। এই জিনগত বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতার ফলে একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন জীবে কিংবা এক প্রজাতির সঙ্গে অন্য প্রজাতির মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। এই জিনগত বৈচিত্র্য সম্ভব হয় জিনের গঠনগত পরিবর্তন বা পরিব্যক্তির মাধ্যমে, যার ফলে প্রকরণ দেখা যায়। এই প্রকরণগুলির জীবের এক জনু থেকে অপর জনুতে স্থানান্তরণ ঘটে। প্রকরণের উপস্থিতির দ্বারাই জীব নিজেদের পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে অভিযোজিত করে। যার ফলে, জীবের প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে। এর ফলে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় অর্থাৎ, জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়। এর থেকে বলা যায় যে প্রকরণ হল জীববৈচিত্র্যের উৎস।

4. প্রকরণের বিভিন্ন প্রকারভেদ ও তাদের গুরুত্ব উল্লেখ করো?

উত্তরঃ  প্রকরণের প্রকারভেদঃ

কোনো জীব প্রজাতির অন্তর্গত একটি জীব থেকে অন্য জীবের বাহ্যিক গঠনগত পার্থক্যকে প্রকরণ বলে। প্রকরণ প্রধানত দুই প্রকার—

[1] অবিচ্ছিন্ন প্রকরণ এবং 

[2] বিচ্ছিন্ন প্রকরণ। 

[1] অবিচ্ছিন্ন প্রকরণ (Continuous variation) : একটি নির্দিষ্ট জীবগোষ্ঠীর বিভিন্ন জীবের মধ্যে যে ছোটো ছোটো ও ক্রমিক গুণগত পার্থক্য দেখা যায়, তাকে অবিচ্ছিন্ন প্রকরণ বলে। অবিচ্ছিন্ন প্রকরণের ফলে জিনগত বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়।

>> উদাহরণ: দুটি মানুষের উচ্চতা, গায়ের রং, পায়ের দৈর্ঘ্য এগুলি সমান হয় না। তাই এগুলি অবিচ্ছিন্ন প্রকরণ।

>> গুরুত্ব: অবিচ্ছিন্ন প্রকরণ একই প্রজাতির বিভিন্ন জীবের মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। এই বৈচিত্র্যগুলির মধ্যে যেগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে, সেই বৈচিত্র্যগুলিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।

 

[2]বিচ্ছিন্ন প্রকরণ (Discontinuous variation): কোনো নির্দিষ্ট জীবগোষ্ঠীর মধ্যে হঠাৎ কোনো বড়ো গঠন বিচ্যুতি দেখা দিলে, তাকে বিচ্ছিন্ন প্রকরণ বলে। বিচ্ছিন্ন প্রকরণের ফলে প্রজাতি বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।

>> উদাহরণঃ মানুষের হাতে বা পায়ে চটি আঙুল। এটি হল বিচ্ছিন্ন প্রকরণের উদাহরণ।

>> গুরুত্ব: মিউটেশন বা পরিব্যক্তি হল বিচ্ছিন্ন প্রকরণ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। পরিব্যক্তির ফলে দ্রুত নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় অর্থাৎ, জীবের প্রজাতি বৈচিত্র্য সৃষ্টির অন্যতম কারণ হল বিচ্ছিন্ন প্রকরণ।

5. অবিচ্ছিন্ন ও বিচ্ছিন্ন প্রকরণের কারণগুলি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ  অবিচ্ছিন্ন প্রকরণ সৃষ্টির মূল কারণগুলি হল— 

[1] ক্রোমোজোমের স্বাধীন সারণ এবং 

[2] জিনের ক্রসিং ওভার। 

[1] ক্রোমোজোমের স্বাধীন সঞ্চারণ: মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময়ে অ্যানাফেজ-1 ও অ্যানোফেজ দশায় পিতা – মাতার যে-কোনো ক্রোমোজোম স্বাধীনভাবে সারিত হয়। এর ফলে নতুন নতুন বৈচিত্র্য সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

[2 ] জিনের ক্রসিং ওভারঃ মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময়ে দুটি জিনের অ্যালিলের মধ্যে ক্রসিং ওভার (বা আদনপ্রদান ঘটে। এর ফলে নতুন জিন সমন্বয় তথা জিন বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।

 

·  বিচ্ছিন্ন প্রকরণের মূল কারণ:

বিচ্ছিন্ন প্রকরণের মূল কারণ হল পরিব্যক্তি বা মিউটেশন। জিনের গঠনগত পরিবর্তন, ক্রোমোজোমের সংখ্যার পরিবর্তন ইত ফলে মিউটেশন বা পরিব্যক্তির সৃষ্টি হয়। এই পরিব্যক্তির ফলেই নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে।

 

  • জীব ও জড়ের পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো?

পার্থক্যের বিষয়

জীব

জড়

উত্তেজিতা

জীব উত্তেজনায় সাড়া দেয়। জড় উত্তেজনায় সাড়া দেয় না।

প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি

প্রজননের দ্বারা জীব বংশবৃদ্ধি করতে পারে। জড় বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।

পুষ্টি ও বৃদ্ধি

খাদ্যগ্রহণ করার ফলে জীবের পুষ্টি, বৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটে। জড়বস্তু খাদ্যগ্রহণ করে না। তাই এদের পুষ্টি, বৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটে না।

চলন-গমন

জীবের চলন, গমন আছে। জড়ের নিজস্ব চলন, গমন নেই।

শ্বাসকার্য

জীব শ্বাসকার্য করতে পারে। জড় শ্বাসকার্য করতে পারে না।

অভিযোজন

জীব পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। জড়ের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা নেই।

পরিব্যক্তি

জীবের দেহে পরিব্যক্তি ঘটে। জড়ের ক্ষেত্রে পরিব্যক্তি ঘটে না।

জীবনচক্র

জীবের জীবনচক্র আছে। জড়ের জীবনচক্র নেই।

জরা ও মৃত্যু

জীবের জরা ও মৃত্যু আছে। জড়ের জরা ও মৃত্যু নেই।

  • কোয়াসারভেট এবং মাইক্রোস্ফিয়ার এর পার্থক্য লেখো?

তুলনার বিষয়

কোয়াসারভেট

মাইক্রোস্ফিয়ার

সংজ্ঞা

‘তপ্ত লঘু স্যুপে’ উৎপন্ন পর্দাবৃত বিন্দু। সমুদ্রের জলে সৃষ্ট দ্বি-লিপিড পর্দাবৃত বিন্দু।

বিভাজন ক্ষমতা

বিভাজন ক্ষমতাবিহীন। বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন।

ভূমিকা

প্রোটোসেল উৎপাদনের পূর্বগঠন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোটোসেল উৎপাদন ক্ষমতাযুক্ত এবং আদি কোশের পূর্বগঠন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গঠনগত উপাদান

প্রোটিন, ফ্যাট, শর্করা, নিউক্লিক  অ্যাসিড। প্রোটিনয়েড থেকে উৎপন্ন প্রোটিন ও অন্য জৈব যৌগ।

 

  • কোয়াসারভেট এবং প্রোটোসেল-এর তুলনা করো ?

তুলনার বিষয়

কোয়াসারভেট

প্রোটোসেল

গঠন

জৈব যৌগ সংবলিত, সীমানাপর্দাবৃত বিন্দু, যা থেকে আদি কোশ সৃষ্টি হয়। প্রোক্যারিওটিক, জেনেটিক উপাদানবিশিষ্ট (RNA), অবায়ুজীবী প্রাণ।

বিভাজন ক্ষমতা

বিভাজন ক্ষমতাবিহীন। বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন।

বৈশিষ্ট্য

জীবন সৃষ্টির ক্ষমতাসম্পন্ন, জৈব পদার্থপূর্ণ গঠন। কোশপর্দাযুক্ত, জৈব পদার্থপূর্ণ পৃথিবীর প্রথম প্রাণ।

 

জীবন ও তার বৈচিত্র্য প্রশ্ন উত্তর ক্লাস ৯

জীবন ও তার বৈচিত্র্য- Class 9 Life Science- Chapter 1

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

 

1.  জীবন বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ  জীবের প্রধান বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ, প্রজনন, বিপাক, উত্তেজিতা অভিযোজন, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের প্রকাশকে জীবন বলে।

2. জনন বলতে কী বোঝ? বংশগতি কাকে বলে ?

উত্তরঃ  জনন: জনিতৃ জীব থেকে একই প্রকার বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীব সৃষ্টির জৈবনিক প্রক্রিয়াকে জনন বলে।

বংশগতিঃ যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার চারিত্রিক গুণাবলি বংশপরম্পরায় সন্তান-সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে।

3. জরা ও মৃত্যু বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ  বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবদেহের শারীরবৃত্তীয় ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে জরা বলে। একসময় জীবনের সমস্ত লক্ষণগুলি লুপ্ত হয়, একে মৃত্যু বলে।

4. সজীব বস্তু বা জীব কাকে বলে ?

উত্তরঃ  যেসব বস্তু জননের মাধ্যমে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টিতে সক্ষম এবং বৃদ্ধি, বিপাক, উত্তেজিতা, ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি প্রাণ বা জীবনের ধর্ম প্রকাশ করতে পারে, তাদের সজীব বস্তু বা জীব বলে।

যেমন—উদ্ভিদ, প্রাণী ইত্যাদি।

5. জড় বস্তু কাকে বলে ?

উত্তরঃ   যেসব বস্তুর চেতনা নেই, স্বেচ্ছায় নড়চড়া করতে পারে না, বৃদ্ধি হয় না, উত্তেজনায় সাড়া দেয় না এবং বংশবিস্তার করে না অর্থাৎ, প্রাণের ধর্মগুলি যাদের মধ্যে প্রকাশ পায় না তাদের জড় বস্তু বলে। যেমন— টেবিল, পাথর ইত্যাদি।

6. চলন ও গমন কাকে বলে?

উত্তরঃ  চলনঃ যে প্রক্রিয়ায় জীব উদ্দীপকের প্রভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে না, তাকে চলন বলে।

গমন: যে প্রক্রিয়ায় জীব উদ্দীপকের প্রভাবে অথবা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তাকে গমন বলে।

7. বিবর্তন বা অভিব্যক্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ  যে অতি মন্থর কিন্তু অবিরাম গতিশীল পরিবর্তনের ফলে উদ্বংশীয় (পূর্বপুরুষ) সচল জীব থেকে নতুন প্রকারের জটিলতর জীবের উদ্ভব ঘটে, তাকে বিবর্তন বা অভিব্যক্তি বলে।

8.প্রকরণ কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রকরণ: কোনো জীব প্রজাতির অন্তর্গত সমস্ত জীবে জিনগত বৈচিত্র্যের কারণে যে বাহ্যিক গঠনগত বিভিন্নতা দেখা যায়, তাকে প্রকরণ বলে।

9. অভিযোজন কাকে বলে ?

উত্তরঃ  অভিযোজন: কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা ও সাফল্যের সাথে প্রজননের জন্য জীবের অঙ্গসংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে, তাকে অভিযোজন বলে।

10. মিউটেশন বা পরিব্যক্তি কাকে বলে? পরিব্যক্তিতা কী?

উত্তরঃ  মিউটেশন বা পরিব্যক্তি: ক্রোমোজোমস্থিত কোনো জিনের আকস্মিক ও স্থায়ী পরিবর্তনকে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি বলে।

পরিব্যক্তিতা: ক্রোমোজোমস্থিত কোনো পরিব্যক্তি ঘটানোর ক্ষমতাকে পরিব্যক্তিতা বলে।

11.  জীবনচক্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ  জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ অবস্থা, বংশবৃদ্ধি এবং মৃত্যু— এই পর্যায়গুলির ধারাবাহিকভাবে চক্রবৎ আবর্তনকে জীবনচক্র বলা হয়।

যেমন—ব্যাঙের জীবনচক্র।

12. উত্তেজিতা কাকে বলে? উদ্ভিদদেহে উত্তেজিতার একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ  উত্তেজিতা: বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে জীবদেহে যে প্রতিক্রিয়া বা পরিবর্তন ঘটে, তাকে উত্তেজিতা বলে।

উদাহরণ: লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে পাতাগুলি তৎক্ষণাৎ মুদে যায়।

13. উয়তাকে জীবের জীবনীশক্তির পরিচালক বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ  উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের অন্তর্গত প্রতিটি জীবের জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দিষ্ট উয়তার প্রয়োজন হয়। সেই কারণে উন্নতাকে জীবের জীবনীশক্তির পরিচালক বলে।

14.  জীবের উৎপত্তির আধুনিক মতবাদটি লেখো। এই তত্ত্বের জনক কে?

উত্তরঃ  জীবের উৎপত্তির আধুনিক মতবাদটিকে জৈবরাসায়নিক উৎপত্তির মতবাদ বা অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্ব বলা হয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী ‘অজৈব রাসায়নিক পদার্থ থেকে জৈব পদার্থ এবং জীবের উৎপত্তি ঘটেছে’। আদি পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার ভৌত শক্তি,

যেমন—তড়িং বিকিরণ, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদির প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে অজৈব গ্যাসীয় বস্তু থেকে জৈব অণুর উৎপত্তি ঘটে।

তত্ত্বের জনক: বিজ্ঞানী ওপারিন ( 1924) প্রথম এই মতবাদের প্রস্তাবনা করেন। বিজ্ঞানী হ্যালডেন পরে এই মতবাদটিকে সমর্থন করেন।

15. হট ডাইলিউট স্যুপ কী?

উত্তরঃ  কেমোজেনি মতবাদ অনুযায়ী, জীব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে অজৈব অণুগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে ক্ষুদ্র জৈব অণুর (কার্বোহাইড্রেট, অ্যামিনো অ্যাসিড, স্নেহ পদার্থ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ) উৎপত্তি ঘটে। এই উদ্ভূত পদার্থসমূহ সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে ভাসতে থাকে। বিজ্ঞান হ্যালডেন (1929) এই ক্ষুদ্র জৈব অণুসমূহের সঙ্গে সমুদ্রের উত্তপ্ত জলের সমাহারকে ‘হট ডাইলিউট স্যুপ’ বলে অভিহিত করেন।

16. প্রোটিনয়েড কী? এর গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ  প্রোটিনয়েড: বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স (1958) প্রায় 18 প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিডের শুষ্ক মিশ্রণকে 150°C – 180°C উয়তায় উত্তপ্ত করেন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইডের মতো বৃহৎ অণু গঠন করে, যাকে প্রোটিনয়েড বলে।

গুরুত্ব: প্রোটিনয়েডগুলি জলে একত্রিত হয়ে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠন করে। বিজ্ঞানী ফক্স-এর মতে আদিকোশ গঠনে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

17.  মাইক্রোস্ফিয়ারে জীবের কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় ?

উত্তরঃ  প্রোটিনয়েড অণুগুলির সংযুক্তির ফলে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠিত হয়। মাইক্রোস্ফিয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

[1] মাইক্রোস্ফিয়ার দ্বিস্তর আবরণযুক্ত।

[2] এদের মধ্যে চলন দেখা যায়।

[3] এরা অভিস্রবণ ধর্মযুক্ত।

[4] মাইক্রোস্ফিয়ারের অভ্যন্তরে উৎসেচকের ধর্মযুক্ত প্রোটিন পদার্থ বর্তমান।

[5] এরা দ্বি-বিভাজন পদ্ধতিতে বিভাজিত হতে সক্ষম।

18. নগ্ন জিন কী?

উত্তরঃ  জীব সৃষ্টির রাসায়নিক মতবাদ অনুযায়ী, কোশ সৃষ্টির অন্তিম পর্যায়ে পিউরিন, পিরিমিডিন প্রভৃতি নিউক্লিওসাইডগুলি পরস্পর সংযুক্ত হয়ে নিউক্লিক অ্যাসিড গঠন করে। এই নিউক্লিক অ্যাসিড প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম ছিল। এই নিউক্লিক অ্যাসিড গঠনে হিস্টোন বা অন্য প্রোটিন অংশ নেয় না। নিউক্লিয় পর্দা দ্বারা আবৃত না থাকার ফলে এই নিউক্লিক অ্যাসিডগুলিকে নগ্ন জিন (naked gene) বলে।

19. কোয়াসারভেট কী? এর গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ কোয়াসারভেট: আদিম পৃথিবীতে সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে শর্করা, প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতি জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত, বিভাজনে সক্ষম কোলয়েড-জাতীয় কণাকেই কোয়াসারভেট বলে। বিজ্ঞানী ওপারিনের মতে, এটিই হল আদিম কোশ।

গুরুত্ব: বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের জলে নিউক্লিওপ্রোটিন সমন্বিত কোয়াসারভেট থেকেই প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়।

20. প্রজাতি কাকে বলে?

উত্তরঃ  একটি নির্দিষ্ট জীবগোষ্ঠীর অন্তর্গত জীব, যারা বংশগতভাবে এক ও আন্তঃপ্রজননক্ষম এবং জননের মাধ্যমে প্রজনন অপত্যের জন্ম দেয়, তাদের প্রজাতি বলে।

21.  বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ  বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই প্রকৃতির ভারসাম্য এবং জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিজ্ঞানীদের মতে, যত বেশি সংখ্যক প্রজাতি পৃথিবীতে টিকে থাকবে এবং পারস্পরিক ক্রিয়ায় অংশ নেবে, প্রকৃতির ভারসাম্য ততই সুস্থির হবে।

22.  বাইরে থেকে আসা কোনো প্রজাতি কীভাবে জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে ?

উত্তরঃ  বাইরে থেকে আসা কোনো উদ্ভিদের বীজ অনেক সময়ে নতুন অঞ্চলে এমনভাবে অভিযোজিত হয় যে, ওই পরিবেশ তার কাছে খুবই অনুকূল হয়। এর ফলে আশেপাশের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন—কচুরিপানা সৃষ্টির ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য বিশেষভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

23) জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? এটি প্রধানত কত প্রকার ?

উত্তরঃ  জীববৈচিত্র্য: কোনো একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বা পরিবেশে, বিভিন্ন প্রকার পরিবেশে এবং বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের গঠন, আকার ও প্রকৃতি অনুযায়ী যে বিভিন্নতা দেখা যায়, তাকে জীববৈচিত্র্য বলে।

প্রকারভেদ: জীববৈচিত্র্য প্রধানত তিন প্রকার। যথা—

[1] জিনগত বৈচিত্র্য,

[2] প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং

[3] বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

24. জিনগত বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উত্তরঃ  একই প্রজাতির মধ্যে জিনের বিভিন্ন প্রকরণ এবং সমন্বয়কে জিনগত বৈচিত্র্য বলে। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য পৃথক হয় ।

25. প্রজাতি বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উত্তরঃ  কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত বিভিন্ন প্রজাতির জীবের বৈচিত্র্যকে ওই অঞ্চলের প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। কোনো বিশেষ অঞ্চলে বসবাসকারী প্রজাতিসমূহের প্রকারের ভিত্তিতে এবং প্রজাতির সংখ্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রজাতি বৈচিত্র্য নির্ধারিত হয়।

26.  বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উত্তরঃ  একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র এবং তাতে উপস্থিত বিভিন্ন জীবসম্প্রদায়ের যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে। বিভিন্ন জীব বিভিন্নভাবে সমন্বিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্র গঠন করে। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের গঠন ও কাজ পৃথক হয়। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের এই বিভিন্নতাই হল বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

যেমন—প্রবাল দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র, বৃষ্টিবনের বাস্তুতন্ত্র।

27. ওপারিন-হ্যালডেন তত্ত্বের স্বপক্ষে একটি পরীক্ষা-নির্ভর প্রমাণ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ  ওপারিন-হ্যালডেন তত্ত্বের প্রমাণ স্বপক্ষে বিজ্ঞানী মিলার এবং ইউরে, প্রাচীন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির সাহায্যে জীবন সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁরা জলীয় বাষ্প (H2O), মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3) ও হাইড্রোজেন গ্যাস (H2)-এর মিশ্রণে তড়িৎবিচ্ছুরণ ঘটিয়ে, বিভিন্ন প্রকার সরল জৈব যৌগ (সরল শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড) উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন।

সিদ্ধান্ত:  এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, অক্সিজেন-বিহীন প্রাচীন পৃথিবীর বিজারক পরিবেশে অতিবেগুনি রশ্মি বা বজ্রপাতের প্রভাবেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগগুলি সৃষ্টি হয়েছিল।